রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১২
ঘরের গোটা দেওয়াল জুড়ে মানুষের যাতায়াতের ছবি...সেসব একমনে দেখতাম। বিকেলবেলায় পাশের বাড়ির সঙ্গে চলতো আমাদের ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। সন্ধে নামার পর মা-চাচিরা গরম তেলেভাজা, মুড়ি আর চা নিয়ে ছাদের একপাশে বসে সুখ-দুঃখের গল্প করতো। আর আমি, অন্যদের সঙ্গে চাঁদের একটুকরো আলোয় বসে বসে কত খেলাই না খেলতাম...তারা গুনতাম দেখতে দেখতে রাত নেমে আসতো গুটিগুটি পায়ে। তারপর ছুটি থেকে ফিরে এসে এই দিনগুলোই লিখে রাখতাম আমার খাতায়। ছুটি ফুরোবার একবুক মনখারাপ আর লেখার ভিতর স্মৃতি এঁকে দেবার আনন্দ, দুটোই বেশ গাঢ় হয়ে উঠত।
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১১
ওদিকে দাদার বাড়ি, সে আমার বাবার বড় হয়ে উঠবার জায়গা। তাই বাবার মুখেই বাবার ছোটবেলাকার গল্প শুনতাম বেশি। আর যখন সুযোগ পেতাম যাওয়ার, তখন খুব কাছ থেকে ছুঁয়ে আসতাম বাবার ছোটবেলা। রেখে আসতাম নিজের ছোটবেলার স্মৃতিও। সেখানে বাড়িটা রাস্তা লাগোয়া। দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে দেখতাম, দরজার ফাঁক দিয়ে আলো এসে ঘরের ভিতরের দেওয়ালে পড়ছে। আর রাস্তায় যারা হেঁটে বা সাইকেলে চলে যাচ্ছে, অথবা আইসক্রিমওয়ালা যখন তার গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে চলে যাচ্ছে পাড়ার ভিতর, তখন সেই ছায়া এসে পড়ছে আলোর উপর।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১০
নানার বাড়ির দোতলা পাকা বাড়িটার উঠোন পেরিয়ে ছিল মাটির একটা বাড়ি। মায়ের কাছে শুনেছি, পাকা বাড়ি হওয়ার আগে নাকি সেই মাটির বাড়িটাই ছিল মায়েদের একমাত্র মাথা গোঁজবার ঠাঁই । তো সেই বাড়িটা ছিল আমার খুব প্রিয়। খড়ের চালায় কত যে চড়ুই পাখি বাসা বেঁধে থাকত, তার ঠিক নেই। সারাটাদিন তাদের কিচিরমিচির ডাক। ঘরের ভিতরে যে পশ্চিম দিকের জানলা ছিল, সেখান থেকে উঁকি দিলেই দেখা যেত একটা পুকুর। পুকুরের ধারে ধারে জমত শ্যাওলা। দু একটা পদ্ম ভেসে থাকতো জলে।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৯
অবশ্য কোথাও বেড়াতে গেলে সেই খাতা আমি সঙ্গে নিয়ে যেতাম না। পাছে হারিয়ে যায়! বা কেউ যদি সিক্রেট পড়ে ফ্যালে! আমি তো কখনোই কাউকে বুঝতে দিতে চাইতাম না, আমার মন কখন খারাপ হয়, কখন আমি কোয়ার্টারের জানলা দিয়ে ইউক্যালিপটাস গাছে বসে থাকা পাখি দেখি! আমি আসলে চাইতাম না, কেউ আমার ভিতরের আমিটাকে চিনুক বা জানুক। আমার মনে হত, ওইটুকু জায়গা শুধু আমার একার। আর কেউ সেখানে আসবে না। তাই পুজোর ছুটি, গরমের ছুটিতে নানার বাড়ি বা দাদার বাড়ি বেড়াতে গেলে সে খাতা আমি শহরেই রেখে যেতাম।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৮
তবে একটা ব্যাপারে বেশ খুশি থাকতাম যে, বাড়ির কেউ জোর করে আমার সেই লেখার খাতা পড়তে আসতো না। ফলে যে কথা কাউকে কখনো বলা হত না, মানে যাকে আমরা "সিক্রেট" বলি, সেসব কথা আমার খাতাটা জানত। আর যেহেতু কাগজ কথা বলতে পারে না... সেহেতু , যতক্ষণ না তাকে কেউ পড়ছে ততক্ষণ খাতায় লেখা শব্দরা নীরব, তাই ওই একটা জায়গাতে ছিল আমার চরম স্বাধীনতা। তাছাড়া আমার হঠাৎ হঠাৎ মন কেমন, আমার চুপ করে বসে থাকা বিকেলবেলা, আমার যাবতীয় দুষ্টুমির প্রতিও ছিল খাতাটার প্রশ্রয়।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৭
ছোটবেলায়, বছরের প্রথম দিনে আমার একটা করে নতুন ডায়েরি হত। ঠিক যেমন জন্মদিন বা ঈদে নতুন জামা হয়, তেমনি। তবে তাকে আমি ডায়েরি বলতাম না, বলতাম লেখার খাতা। সেই প্রথম দিন, বাবা আমার হাতে ওই খাতাটা দিয়ে বলতো, আমি যেন রোজকার টুকরো টুকরো ঘটনা সেখানে লিখে রাখি। আমিও বাবার কথা মতো, লিখতাম। আকাশে মেঘ করলে, ঘুম থেকে দেরীতে উঠে বকা খেলে, এক একদিন পড়তে বসতে ইচ্ছে না করলে...অথবা জুতোর বাক্সে গুটিপোকা পুষলে, সেইসব ঘটনা লিখে রাখতাম। যাই দেখতাম, তাই লিখতাম।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৬
বাবা চিরকালই অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেছেন৷ আমরাও সেভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি ৷ তাঁদেরকে ছেড়ে অনেক দূরে এসে সংসার করছি, তবু ভালোমন্দ সব কাজে তাঁদের কথাই প্রথমে মনে পড়েছে সবসময় ৷ পরীক্ষার সময় ফোন করে দো'আ চেয়েছি, এতেই নিশ্চিন্ত নির্ভরতা পেয়েছি বা দূরে কোথাও যাবার আগে শুধু বলেছি যাচ্ছি, ব্যস! মনে হয়েছে নিরাপদে পৌঁছে যাব ৷.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৫
ঈদের আগে আমাকে বললেন - এবার আমার জন্য কিছু কিনতে হবে না । কয়েকদিন পর আবার বললেন - তুমি তো দেখছি সবার জন্য অনেক কিছু কিনেছ, তাহলে আমাকে শুধু একটা স্যান্ডেল কিনে দিতে পারো, তবে পাঁচশ টাকার বেশি দাম যেন না হয়। আমি খুশি হয়ে বাজার থেকে আরামদায়ক একটা স্যান্ডেল বাইশ’শ টাকা দিয়ে নিয়ে এলাম। সেটা পায়ে দিয়ে করিডোরের এমাথা ওমাথা হেঁটে হেঁটে বলছিলেন - এত টাকা দিয়ে কেন আনতে গেলে? কিন্তু চোখ দুটো তাঁর আনন্দে জ্বল জ্বল করছিল, আমারও আনন্দে চোখে পানি এসেছিল সেদিন!
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৪ (*)
অনার্স প্রথম বর্ষে আমার চিকেন পক্স হলো ৷ শরীরে তিল ধারণের জায়গা বাকি নেই ৷ সারাদিন সংসারের কাজের শেষে মা খুব একটা সেবা করার সুযোগ পেতেন না ৷ বাবা তখন আমার হাতে-পায়ে প্রতিটি দানার উপর পরম যত্নে মাখন লাগিয়ে দিতেন ৷ পরীক্ষার সময়গুলোতে রাত জেগে পড়াশুনা করতাম, না ঘুমানো পর্যন্ত বারান্দায় পায়চারী করতেন ৷ কতদিন হলে দেখা করতে এসেছেন, আসার সময় মা হয়ত হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন বাড়ির মুরগির ডিম, সেটাই পাঞ্জাবির পকেটে করে নিয়ে এসেছেন, এভাবে কতদিন ...
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৩
অনার্স লাইফে হলে সিট পেলাম, জীবনে প্রথমবার বাড়ি ছেড়ে দূরে থাকা ৷ মন্নুজান হলের নতুন বিল্ডিং, ফার্নিচার ও তৈরী হয়নি ৷ হল সুপার বললেন - আপাতত তোমরা দু'হাত চওড়া একটা খাট নিয়ে এসে উঠে যাও ৷ বাবা বাজার থেকে খাট কিনে আনলেন কিন্তু চারপাশে পালঙ্কের মত স্ট্যান্ড দেওয়া ৷ সবাই অবাক! এটা আবার কী? বাবা বেশ সিরিয়াস ভঙিতে বললেন - আমার মেয়েটা কখনও মশারি টানাতে চায় না, তাই আমি এভাবে রেডি করে এনেছি ৷ মেয়েদের হলে স্বভাবতই পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, সুপারের প্রবল আপত্তি দু'হাতে ঠেলে সেদিন বাবা আমার হলে ঢুকে ওই.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ২
ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নামাজ কালাম ছাড়াও সত্য বলা, বিপদে মানুষকে সহযোগিতা করা, অন্যের দু:খে ব্যথিত হওয়া প্রভৃতি নৈতিক শিক্ষাগুলো বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি ৷ তিনি খুবই ধর্মভীরু ছিলেন, তবে গোঁড়া নন ৷ আধুনিক মন মানসিকতার ছিলেন এবং সেই বিষয়গুলো আমাদের মাঝেও সঞ্চারিত করেছেন ৷ বাড়ির সামনে নারকেল গাছ ঘেরা একটা বিশাল জায়গা ছিল আমাদের ৷ সেটা দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গনি মিয়াকে ৷ কয়েক বছর পর আমরা জানতে পারলাম,গনি মিয়া কিভাবে যেন জায়গাটা জাল দলিল করে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছে ৷.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১
স্কুল জীবনের পড়াশুনা সবাই বাবার স্কুলে করেছি, কলেজ পর্যায়ে গিয়ে সবার পড়াশুনার ব্যয়ভার বহন করা বাবার জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল ৷ আমরা ভাই-বোনেরা অতি মেধাবী না হলেও মেধাবী ছিলাম ৷ তাই বেশ কষ্ট করে হলেও সবাই পড়াশুনা শেষ করেছে ৷ বাবা আমাদেরকে অনেক শক্ত ভাবে মানুষ করেছেন ৷ সব সময় বলতেন - 'সব কাজই মন দিয়ে করবে, আমি যেন বলতে পারি আমার ছেলে মেয়েরা সব কাজ পারে ' ৷ আট বছর বয়সে এতিম হয়ে যাওয়া একজন মানুষ কিভাবে শিক্ষা-দীক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল - বাবার সেই সব বাস্তবতা আমাদের কাছে আদর।.
রিনময়
- তাকে ভালবেসে বুকে
কালা কলুয়া চৌসঠ বীর তাল ভাগীতোর জহা কে, ভেকো বহি কু জায়ে মাংস মজ্জা কু শব্দ বন, জায়ে আপনার মারা, আপ দিখাবে চলতো বাণ! পড়েছেন ওপরের টুকু, যদি কঠিন ভেবে ফাঁকি মেরে স্কিপ করে এসে থাকেন তাহলে বলবো গিয়ে আবার পড়েন। এটা বশীকরন মন্ত্র। একদম অব্যার্থ এই মন্ত্রটি টানা সাতবার সঠিক উচ্চারন করলে কেল্লা ফতে(!) আমি ছয়বার পড়ে পরে বাদ দিয়েছি, লেখিকাকে বশীকরন মন্ত্র দিয়ে আবদ্ধ করে ফেললে পরে আপনারা আর নতুন বই পাবেন না। এবার আসল কথায় আসি। একদম তরুন একজন লেখিকার ভিন্নধর্মী তেরটি গল্প নিয়ে লেখা একটি বইয়ের নাম।.
রিনময়
- মা মা মা এবং বাবা রিভিউ
বইয়ের প্রথম গল্পটিতেই রয়েছে একজন মায়ের গর্ভে সন্তান আসার সময় থেকে শুরু করে বিয়ে করে মায়ের থেকে দূরে চলে যাওয়া পর্যন্ত মায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ সব অনুভূতির কথা। নিজ সন্তানকে লিখা একজন মায়ের চিঠিতে উঠে এসেছে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা, টান আর হাহাকারের কথা। বইয়ের দ্বিতীয় গল্পটিতে একজন বাবার আত্নকথন রয়েছে। একজন লোক তার প্রথম জীবনে কিছুটা উছৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিল। একদিন সে একজন অন্ধ মহিলাকে পায়ে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। আল্লাহ-পাকের লীলাখেলার স্বীকার হয়ে সেই লোকটির প্রথম সন্তান জন্ম নেয় অন্ধ হয়ে।.
রিনময়
- মা, মা, মা এবং বাবা
প্রারম্ভিকা: মা , মা, মা এবং বাবা, নামটাই কত অদ্ভুত, তাই না? শুধু অদ্ভুত না। অদ্ভুতরকম সুন্দর। আমার কাছে বর্তমানে অনেকগুলো এমন বই আছে, যেগুলো আমি পড়িনি এখনও। পড়তে বসতে ইচ্ছাই করেনি। কিন্তু এই বইটির অসম্ভব সুন্দর আর আনকমন নামটি আমাকে টেনে হেঁচড়ে বইটির কাছে নিয়ে গেছে। আর যে আমি বই পড়তে অনেক সময় নেই, সেই আমাকে বইটি এক বসাতে পড়তে বাধ্য করেছে। ১৭৫ পৃষ্ঠার একটি বই কিন্তু এক বসাতে পড়া চাট্রিখানি কথা নয়। শ্রদ্ধেয় আরিফ আজাদ ভাইয়ের সম্পাদিত ১৭৫ পৃষ্ঠার বইটিতে ৩৫ টি ইসলামিক গল্পের পাশাপাশি রয়েছে কুরআন।.
রিনময়
- অন্দরমহল বই রিভিউ
ক্ষমতার জন্য কৌশলে লড়াই। তবে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষের সাথে নয়। কারণ বীনাবালা যেভাবে ক্ষমতাটা চেয়েছে সেভাবে চায়নি দেবেন্দ্রনারায়ণ বা দীপেন্দ্রনারায়ণ। বিষ্ণুনারায়ণের তিন পুত্রের মধ্যে মেজো পুত্র দেবেন্দ্রনারায়ণই অধিক যোগ্য সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে। দেবেন্দ্রনারায়ণের বড় ভাই অবনীন্দ্রনারায়ণেরও জমিদারির প্রতি কোনো লোভ নেই। উনি হচ্ছেন গানপ্রিয় মানুষ। ঝামেলা উনার পছন্দ নয়। এদিকে কনিষ্ঠ দীপেন্দ্রনারায়ণ বড় দুই ভাইকে রেখে তার পিতা পরবর্তী জমিদার হওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। কিন্তু জমিদার পরিবারের রক্ত।
রিনময়
- অন্দরমহল
"গঙ্গামহল অথবা অন্দরমহলের গল্প" . "আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম। " ৪৩৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসের একেবারেই শেষের লাইনটি দিয়ে শুরু করলাম রিভিউ লেখা। কারণ এই একটি লাইন বা উক্তির মর্মার্থ যদি বীণাবালা বুঝতে পারতো তবে গোটা বইটাই সৃষ্টি হত না বোধহয়। "অন্দরমহলের বাতাসে-বাতাসে ভয়ানক দুর্যোগের আভাস। এই দুর্যোগ কালব্যধি গুটিবসন্তের চেয়েও ভয়ঙ্কর।" ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির নেশা বড় নেশা। বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের দীর্ঘ কলেবরের বইগুলো পড়ার সাহস করে উঠতে.
হুমায়ূন আহমেদ
- মানসিক ক্ষমতা
গভীর প্রেম মানুষকে পুতুল বানিয়ে দেয়। প্রেমিক প্রেমিকার হাতের পুতুল হন কিংবা প্রেমিকা হয় প্রেমিকের পুতুল। দুজন এক সঙ্গে কখনো পুতুল হয় না। কে পুতুল হবে আর কে হবে সূত্রধর তা নির্ভর করে মানসিক ক্ষমতার উপর। মানসিক ক্ষমতা যার বেশী তার হাতেই পুতুলের সুতা।.