রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ৭
ছোটবেলায়, বছরের প্রথম দিনে আমার একটা করে নতুন ডায়েরি হত। ঠিক যেমন জন্মদিন বা ঈদে নতুন জামা হয়, তেমনি। তবে তাকে আমি ডায়েরি বলতাম না, বলতাম লেখার খাতা। সেই প্রথম দিন, বাবা আমার হাতে ওই খাতাটা দিয়ে বলতো, আমি যেন রোজকার টুকরো টুকরো ঘটনা সেখানে লিখে রাখি। আমিও বাবার কথা মতো, লিখতাম। আকাশে মেঘ করলে, ঘুম থেকে দেরীতে উঠে বকা খেলে, এক একদিন পড়তে বসতে ইচ্ছে না করলে...অথবা জুতোর বাক্সে গুটিপোকা পুষলে, সেইসব ঘটনা লিখে রাখতাম। যাই দেখতাম, তাই লিখতাম।.
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১৫
এখন কষ্ট হয়, আগের স্মৃতিদের কখনও ফিরে পাব না। তবুও হাজার বাঁধনে আটকে রাখলেও বাবা ছাড়া আমি অসহায়। আমার এই কুড়ি বছরের জীবনে একটা দাপ্তরিক কাজও আমি নিজ হাতে করিনি। প্রতিটা জরুরি কাগজপত্র ঠিকঠাক করা থেকে জমা দেওয়া পর্যন্ত বাবাকেই দৌড়োতে হয়েছে। অভ্যাসটা এতো মারাত্মক যে, সামান্য একটা কাজ একা করতে গিয়েও হিমশিম খেয়েছি, অথচ সবটা বাবা বুঝিয়েই দিয়েছিলেন।.
??????????? ??????
সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি।
রিনময়
- অন্দরমহল বই রিভিউ
ক্ষমতার জন্য কৌশলে লড়াই। তবে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষের সাথে নয়। কারণ বীনাবালা যেভাবে ক্ষমতাটা চেয়েছে সেভাবে চায়নি দেবেন্দ্রনারায়ণ বা দীপেন্দ্রনারায়ণ। বিষ্ণুনারায়ণের তিন পুত্রের মধ্যে মেজো পুত্র দেবেন্দ্রনারায়ণই অধিক যোগ্য সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে। দেবেন্দ্রনারায়ণের বড় ভাই অবনীন্দ্রনারায়ণেরও জমিদারির প্রতি কোনো লোভ নেই। উনি হচ্ছেন গানপ্রিয় মানুষ। ঝামেলা উনার পছন্দ নয়। এদিকে কনিষ্ঠ দীপেন্দ্রনারায়ণ বড় দুই ভাইকে রেখে তার পিতা পরবর্তী জমিদার হওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। কিন্তু জমিদার পরিবারের রক্ত।
হেলাল হাফিজ
- একটি পতাকা পেলে
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে, আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,-'পেয়েছি, পেয়েছি'। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে।.
মোস্তফা তারিকুল আহসান
- বাংলাদেশের উপন্যাস : একটি সরল পাঠ
উপন্যাস প্রত্যয়টির সঙ্গে পরিচিত সবাই জানেন, ইউরোপে শিল্প-বিপ্লবের পর, ব্যক্তি মানুষ যখন জেগে ওঠে অর্থাৎ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের জন্মের পর উপন্যাসের আবির্ভাব হয়। সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। মহাকাব্যের বিশাল পটভূমিতে ব্যক্তিজীবনের অনুভূতি-ক্লেদ পাঠক ঠিকমতো খুঁজে পেত না। মহাকাব্যের যুগ শেষ হওয়ার পরই সে-কারণে উপন্যাসের যুগ বোধহয় শুরু হয়। অসম্ভব এক সম্ভাবনাকে মানুষের সামনে প্রতিভাত করার প্রত্যয় থেকে উপন্যাস লেখার প্রচলন হয়। সাহিত্যের এ-ফর্মকে সহজে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়।.
সৌরভ
- মুক্তিযুদ্ধ
যাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি তাঁদের মনে হতাশা সৃষ্টি করেছিল। আমি মনে করি, এটা শুধু পাকিস্তানফেরত সামরিক কর্মকর্তা-সৈনিকদের বেলায় প্রযোজ্য নয়, এটা মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তা-সৈনিকদের বেলায়ও প্রযোজ্য। মুক্তিযোদ্ধাদেরও হতাশা ছিল, আমরা কিসের জন্য যুদ্ধ করলাম। এ রকম রাজনীতি ও শাসনের জন্য যুদ্ধ করিনি। সুতরাং এ ক্ষোভটা সবার মধ্যে ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিতান্ত সরল ছিল না। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অবস্থান ছিল সংঘাতময়। অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলিরও ছিল নানামুখী স্রোত।.
আবু ইসহাক
- দীঘল বাড়ী
আসলে গয়নাগুলো ছিল ওসমানের প্রথমা স্ত্রীর। সে মারা যাওয়ার পর চোখা রূপার এই গয়নাগুলোকে মেজে ধুয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। জহিরুদ্দিন গয়না হাতে নিয়ে ভালো করে পরখ করে। নাকের নোলক ও নাকফুল ছাড়া আর কোনটাই তার কাছে রূপার বলে মনে হয় না। সে কেমিক্যালের কানফুল জোড়া এক দিকে সরিয়ে হাত দিয়ে আর গুলো চোকের কাছে নিয়ে দেখে। কিন্তু বরপক্ষের এত লোকের সামনে কথা বলতে তার সাহস হয় না। সত্যিই যদি রূপার জিনিস হয়ে থাকে তবে মজলিশের এত লোকের সামনে লজ্জায় কান কাটা যাবে। কেউ হয়ত বলেও বসতে পারে,- বাপের বয়সে রূপা দ্যাহ নাই কোন দিন?
রিনময়
- সাপ্তাহিক বাবা ১৩
বড় হবার পর অবশ্য নিয়ম করে রোজকার কথা খাতায় লিখতে বসা হয় না। তাছাড়া বছরের শুরুতে বাবা নতুন ডায়েরি আর হাতে তুলে দেয় না বলে, তাগিদটাও নেই। মনটাও তো নানান দিকে, নানান কাজে ছড়িয়ে থাকে বলে এক জায়গায় তাকে আটকাতে পারি না সবসময়। স্মৃতি ভেসে এলে কেবল ফেসবুকের পাতায় লিখি। তারপর যেভাবে জমাট বাঁধা মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে গেলে চারপাশে একটা শান্তির হাওয়া বয়, তেমনি মনে পড়া গুলো লিখবার পর, বেশ আরাম হয়। মনে হয়, মন কেমনের বোঝা কমলো বুঝি কিছুটা।.